Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
খড়ের বাগান
স্থান
নন্দলালপুর ইউপির অর্ন্তগত।
কিভাবে যাওয়া যায়
কুমারখালী বাসস্ট্যা- থেকে সোজা মহাসড়ক ধরে ৫ কিঃমিঃ গেলে আলাউদ্দিন নগর অতিক্রম করে বামদিক দিয়ে সোন্দাহ রাস্তা তারপর কিছুদূর গেলে নন্দলালপুর বাজার আর আধাকিলোমিটার গেলেই মনোরম খড়জঙ্গলের অপার সুষমা সৌন্দর্য হৃদয়ফুঁড়ে ডাকছে প্রাণজুড়ে নিঃশ্বাস নিতে একটুখানি পরশবুলানো আদর দিতে। সাংস্কৃতিক রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র সংস্কৃতিনগরী কুমারখালী। এখানেই বিশ্বকবির চারণভূমি শিলাইদহ কুঠিবাড়ি ৫কিঃমিঃ দক্ষিণে, ৫কিঃমিঃ দক্ষিণ-পশ্চিমে বিশ্বলোককবি বাউল সম্রা্ট লালন সাঁইজির ধাম ছেউরিয়া মাজার। ৫কিঃমিঃ দক্ষিণ-পূর্বে অমরগ্রন্থ ‘বিষাদসিন্ধু’র রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের বাস্ত্তভিটা। ৫কিঃমিঃ পূর্বউত্তরে গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের স্মৃতিধন্য কুমারখালী ও তাঁর ঐতিহাসিক এম.এন প্রেস।
বিস্তারিত

 

ঘর হতে শুধু দু’পাফেলিয়া...প্রকৃতিস্বর্গ খড়জঙ্গলে

 

‘‘দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দু’ পা ফেলিয়া

একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু’’।

 

রবীন্দ্রদর্শন যে আমাদের মর্মে মরমি কি বিষয়গত কি ভাবগত যাই বলি না কেন সঠিক ও সত্য থেকেও তা ঢের বেশি। বোধ হয় বাঙালির দৃষ্টিসীমাই ঊর্দ্ধমুখী। বোল বোল বোলারা বাঙালি ভোলারা-এ আপ্ত বাক্যও হয়তো প্রযোজ্য। আমরা সময় পেলে ছুটতে চাই ই্উরোপ-মেরিকায়। কিন্তু আমাদের আশপাশে যে সৌন্দর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তা দেখার ফুরসত কিংবা প্রয়োজন বোধ করিনা। তেমনি  এক সৌন্দর্যাশ্চর্য নৈসর্গ হাতের নাগালে অবহেলা আর অদেখায় আড়ালে থেকেই বিলিয়ে যাচ্ছে তার প্রাকুশ প্রেম। এখানে প্রকৃতি এমন এক বৃক্ষরাজি দিয়ে ইন্টেরিয়র ডিজাইন এঁকেছে  না দেখলে বোঝার উপায় নেই। চারিদিক খয়েরীবাগান মালিহীন বিস্ময়রূপে দাঁড়িয়ে আছে বহুদিন ধরে। পাশঘেষে গড়াই নদীর পাড় তারই বক্ষজুড়ে একাংশে পলিপড়া চরে সবুজ সোনা চাদোয়া খড়বৃক্ষ কোলজুড়ে অবারিত বিশুদ্ধ ভালবাসা নিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের নিরতভাবে ডেকে যাচ্ছে অথচ আমরা তাতে সাড়া দিচ্ছি না। অসংখ্য খড়ের গাছ। শিশু গাছগুলো সবুজি-লাল, একটু বয়স্করা গাঢ় খয়েরী। খড়বৃক্ষ প্রকৃতিগতভাবে সৃষ্টিকর্তা এমনভাবে সাজিয়ে রেখেছেন যেন কোন মানবডিজাইনারের পরিকল্পনায় তা এক্কেবারে অসম্ভব। খড়বৃক্ষগুলো আকারে বড় না হলেও ডালপালা প্রশ্বসত্ম ও বিসত্মৃত। খর্বাকৃতির এ গাছ থেকেই পান খাওয়া খয়ের সংগ্রহ করা হয়। খেজুর গাছের মতো এর বক্ষ চিরে রস সংগ্রহ করে জ্বালিয়ে রৌদে শুকিয়ে চৌকাকৃতির খড় বানানো হয়। সম্ভবত বাংলাদেশে প্রকৃতিগতভাবে বেড়ে ওঠা এ খড়জঙ্গল সর্ববৃহৎ। অপরূপ সৌন্দর্যনিয়ে যে হাতছানি দেয় সান্ধ্যসময় তৈরী হয় সাযুজ্য সংকেত। একদিকে মনোরম খড়জঙ্গল ছোট্ট ছোট্ট খরগোশ ছানার পায়ের ছাপ ভিতরে। অগোছালো ধুলিরাসত্মায় গ্রামীণ মানচিত্রা। চরে বেড়ে ওঠা গড়ে তোলা খেয়ালি মাঠ তাতে সবুজ চাদর বিছানো। তারই পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শুকনো গড়াই সিকসিত্ম হতে হতে নিঃসম্বলা তবু রসসিঞ্চন করে যাচ্ছে । পশ্চিমাকাশে সূর্য হেলে পড়লে যেন আ্র মন ধরে রাখা যায় না। অসত্মমিত সূর্যের লাল আভা খড়জঙ্গলের উপর পড়ে এক ভূস্বর্গের সৃষ্টি্ করে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। হাতের কাছে এমন সুন্দর অদ্ভুত অভিমানী খড়বাগান খেড়ো হয়ে আছে অথচ আমরা একে মোহনীয় রূপে দেখতে চাই না। হতে পারে এটি একটি বিনোদন ও পিকনিকস্পট। ভ্রমণপিয়াসীদের নন্দন পার্ক, দম্পতিদের অবকাশ যাপনের স্থান,যুগলদের আড়ালের ভালবাসা কিংবা দর্শনাথীদের প্রকৃতিপ্রেম। কোনরকম অর্থব্যয় নির্বাহ ছাড়াই এটি গড়ে উঠতে পারে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে। কুষ্টিয়া শহর থেকে আট কিঃমিঃ মহাসড়ক বেয়ে কুমারখালী আলউদ্দিন নগর তার ডানপাশের রাসত্মা ধরে ১ কিঃমিঃ নন্দলালপুরবাজার দিয়ে আধা কিলোমিটার যেয়ে চাপড়া চরেই এর অবস্থান। খড়জঙ্গলটি চরচাপড়ায় বসবাস করছে এতদিন ধরে। আমাদের দৃষ্টি সীমা তাকে আবদ্ধ করতে পারেনি। কুমারখালী বাসস্ট্যা- থেকে সোজা মহাসড়ক ধরে ৫ কিঃমিঃ গেলে আলাউদ্দিন নগর অতিক্রম করে বামদিক দিয়ে সোন্দাহ রাস্তা তারপর কিছুদূর গেলে নন্দলালপুর বাজার আর আধাকিলোমিটার গেলেই মনোরম খড়জঙ্গলের অপার সুষমা সৌন্দর্য হৃদয়ফুঁড়ে ডাকছে প্রাণজুড়ে নিঃশ্বাস নিতে একটুখানি পরশবুলানো আদর দিতে। সাংস্কৃতিক রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র সংস্কৃতিনগরী কুমারখালী। এখানেই বিশ্বকবির চারণভূমি শিলাইদহ কুঠিবাড়ি ৫কিঃমিঃ দক্ষিণে, ৫কিঃমিঃ দক্ষিণ-পশ্চিমে বিশ্বলোককবি বাউল সম্রা্ট লালন সাঁইজির ধাম ছেউরিয়া মাজার। ৫কিঃমিঃ দক্ষিণ-পূর্বে অমরগ্রন্থ ‘বিষাদসিন্ধু’র রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের বাস্ত্তভিটা।  ৫কিঃমিঃ পূর্বউত্তরে গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের স্মৃতিধন্য কুমারখালী ও তাঁর ঐতিহাসিক এম.এন প্রেস। এছাড়াও অসংখ্য মনীষীর জন্মস্থান ও পূণ্যভুমি কুষ্টিয়ার এ কুমারখালী পর্যটনকেন্দ্র রূপে গড়ে তোলা গেলে  দর্শনাথীরা একসাথে এতসব মনীষীর   সন্ধান পাবে এবং পিপাস মিটানো প্রকৃতিস্বর্গ চর-চাপড়া খড় জঙ্গলে এসে বিরামহীন বিশ্রাম পাবে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও সে সময় শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে খড়ের গাছ লাগিয়ে বাঁচাতে কিংবা বাগানে রূপামত্মরিত করতে পারেনি। কিন্তু এখানে কুমারখালীর চরচাপড়া গ্রামের নদীপাড়ে প্রকৃতিভাবে বেড়ে ওঠেছে খড়জঙ্গলটি।  নদীপাড়ের চরে হাজার হাজার খড়ের গাছ যে নৈসর্গিক সৌন্দর্য বিলিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও ভারসাম্যের জন্য হাপিত্যেশ করছে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের পাশাপাশি বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর,সমাজ-পরিবেশ সংষ্কারক, এলাকাবাসী ও ইতিহাস-ঐতিহ্য-প্রকৃতি রক্ষাবাদীদের এগিয়ে আসতে হবে। আবিষ্কার করতে হবে খড়জঙ্গলের অপার নান্দনিকতাকে । প্রকৃতির অকৃপণ দান এ দুর্লভ সম্পদ; এ খড়সম্পরাজির মাঝে অন্যদের সঙ্গী করে নিজেকে বিলোল করতে চাই।

লেখকঃ কে, আই, লিটন আব্বাস।