Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
শিলাইদহ কুঠিবাড়ী
স্থান
শিলাইদহ ইউপিতে
কিভাবে যাওয়া যায়
কুমারখালী শহর থেকে ভ্যান, রিক্সা, অটো-রিক্সা, সিএনজি করে যাওয়া যায়।
বিস্তারিত

পর্যটক মৌসুমে আপনিও ঘুরতে যেতে পারেন

ইতিহাস ঐতিহ্যের লিলাভূমি কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে

শত ঐতিহ্য আর গৌরবের এক সোনালী নাম কুষ্টিয়ার কুমারখালী। জগৎ বিখ্যাত মনীষীদের জন্ম আর পদচারনায় ধন্য ও গর্বিত এখানকার মাটি। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলে খ্যাত কুষ্টিয়ার প্রাণ কেন্দ্র কুমারখালী একটি শিল্পশহর ।

কুমারখালীর পরিচিতিঃ

১৮২৮ সালে পাবনা জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হলে কুমারখালী পাবনা জেলার অমর্ত্মভুক্ত হয়। এর আগে যশোরের মধ্যে ছিল। ১৮৫৭ সালে কুমারখালীতে মহকুমা প্রতিষ্ঠা হয়। কুমারখালী মহকুমার অধীনে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি, পাংশা, কুমারখালী, খোকসা ও অধুনালুপ্ত ভালুকা থানা অমর্ত্মভূক্ত হয়। ১৪ বছর পর ১৮৭১ সালে কুমারখালী মহকুমা বিলুপ্ত হলে কুমারখালী থানা হিসাবে জন্ম লাভ করে এবং নবগঠিত কুষ্টিয়া মহকুমার অমর্ত্মভুক্ত হয়। এ সময় কুষ্টিয়া মহকুমা নদীয়া জেলার সাথে সম্পৃক্ত ছিল।

১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমারখালী পৌরসভা বর্তমানে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। কুমারখালীর মাটিতে জন্ম গ্রহণ করেছে, খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিককর্মী, ক্রীড়াবীদসহ অনেক গুনিজন।

সাহিত্যিক সাংবাদিক কাঙালহরিনাথ মজুমদার’র সম্পাদনায় কুমারখালী থেকেই বাংলার প্রাচীন অন্যতম সংবাদপত্র ‘‘গ্রাম বার্তা’’ প্রকাশিত হয়। পদ্মা-গড়াই বিধৌত কুমারখালীর রূপ-রস আর সীমাহিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রাচীন কাল থেকেই বিশ্বখ্যাত পর্যটক, মনীষী আর বিখ্যাত ব্যক্তিরা ছুটে এসেছেন এই জনপদে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক মীর মশাররফ হোসেন, বাউল সম্রাট ফকির লালনশাহ প্রমুখ বিশ্বখ্যাত মনীষীরা আসত্মানা গড়ে তোলেন এই কুমারখালীতে।

শিলাইদহে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ীঃ 

কুমারখালীর অন্যমত একটি পর্যটন কেন্দ্র হল শিলাইদহে অবস্থিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ী। পর্যটন মৌসুম ছাড়াও বছরের বেশীর ভাগ সময় এখানে দেশী বিদেশী পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন অফিস আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পিকনিক করতে এখানে আসেন। দেশী-বিদেশী পর্যটকের আনাগোনায় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজরিত কুঠিবাড়ী মুখরিত থাকলেও আজও জাতীয় ভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃতি মেলেনি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ’র স্মৃতি বিজড়ীত গ্রাম এই শিলাইদহ। কুঠিবাড়ীর  উত্তরে পদ্মা আর দক্ষিণে রয়েছে গড়াই নদী। কুঠিবাড়ীর দোতলা থেকে প্রমত্তা পদ্মা সহজেই চোখে পড়ে। কুমাখালী থেকে শিলাইদহের দূরত্ব মাত্র ৫/৬ কিলোমিটার। এই নিভৃত পল্লী গ্রামের সংস্পর্শে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার প্রতিভার বিচিত্র বিকাশ সাধন করেছেন।

১৮৯৯ সালে জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথ এই শিলাইদহে আসেন। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সময়ে এই শিলাইদহের পদ্মা পাড়েই সর্ব প্রথম মসত্মবড় নীলকুঠি তৈরী করেন। যখন নীলের ব্যবসা গুটিয়ে সাহেবরা চলে যায় তখন তিন তলার কুঠিরের নীচতলায় জমিদারী খাজনা গ্রহণের কাচারী প্রতিষ্ঠিত হয় এবং অপর দু’তলা বাসস্থান হিসাবে ব্যবহৃত  হতে থাকে। নীলকুঠির প্রমত্তা পদ্মার গর্ভে বিলিন হবে এমন আশংকায় ভেঙ্গে ফেলা হয়। এরপর নতুন করে ১৮৯২ সালে নির্মান করা হয় বর্তমানের স্মৃতিধন্য এই শিলাইদহ কুঠিবাড়ী এবং কুঠিবাড়ী থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দুরে নির্মাণ করা হয় খাজনা আদায়ের জন্য দ্বিতল বিশিষ্ট কাচারী ভবন।

জরাজীর্ণ অবস্থায় কাচারী ভবনটি কয়া ইউপির ভূমি অফিস হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ভবনের সম্মুখে ছিল পুকুর ঘাট। সেটিও বিধবংসত্ম অবস্থায় শুধুই কালে স্বাক্ষী হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টিতে ৫/৭ বিঘার উপর নির্মিত এই কাচারি ভবনটিও হতে পারে পর্যটকদের দর্শনীয় একটি স্থান।   

২২ বিঘা জমিতে প্রায় চার বিঘার উপর প্রাচীর বেষ্ঠিত তিনতলা ভবন এই কুঠিবাড়ী। বাড়ীটির কামরার সংখ্যা ১৮টি। নীচতলায় ৯টি, ২য় তলায় ৭টি ও ৩য় তলায় ২টি কামরাসহ সর্বোমোট ১৮ কামরায় ৮৩টি জানালা, ১৮টি কারুকার্য খচিত দরজা। এসব কামরায় শতাধিক দুর্লভ ছবি ও কবির ব্যবহৃত পালকী, চেয়ার, টেবিল, খাট, স্প্রিটবোর্ড, গদি চেয়ার, নৌকা, সোফাসেট, লেখার টেবিল, আলমারিসহ বিভিন্ন আসবাপপত্র সংরক্ষিত রয়েছে। কুঠিরের পিছনেও রয়েছে ১টি আকর্ষনীয় লোহার তৈরী পেঁচানো সিঁড়ি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য জীবনের বিরাট অংশের সাথে জড়িয়ে আছে পদ্মা ও গড়াই নদী। এখানেই কবির যৌবনের প্রথম ছোট্ট গল্পের সূত্রপাত ঘটে ছিল। শিলাইদহে বসেই রবীন্দ্রনাথ পল্লীর অনুকূল পরিবেশের রূপ দর্শন করে অনর্গল লিখেছেন। এটা ছিল সাহিত্য সৃষ্টির উর্বর স্থান। সোনার তরী, মানব সুন্দরী, উর্বশী, চিত্রা, ক্ষণিকা, গীতিমাল্যের অনেক কবিতা ও গানসহ নোবেল প্রাপ্ত গীতাঞ্জলী এই শিলাইদহে বসেই তিনি লিখে ছিলেন। তাছাড়া এই শিলাইদহে গগন হরকরা রচনা করেন ‘‘আমার সোনার বাংলা’’।  আর সে জন্যই কবি লিখেছেন ‘আমার জীবনের যৌবনও পৌড় জীবন সায়াহ্নে সাহিত্য সাধনার তীর্থস্থান ছিল পদ্মা প্রবাহ চুম্বিত শিলাইদহ। কবি এখানে একটানা ১৮৯৯ থেকে ১৯০১ সাল পর্যমত্ম জমিদারী পরিচালনায় থেকেছেন। এছাড়াও সাহিত্য সাধনার কবি জন্য দূর থেকে বার বার ছুটে এসছেন শিলাইদহে। সাহিত্য সাধনার কবি কতবার যে শিলাইদহে এসেছেন তার কোন হিসাব নেই। ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ীর পশ্চিমে রয়েছে কবির সাহিত্য সাধনার এক মহতি নিদর্শন ‘বকুল তলার ঘাট’। এই বকুল তালার পুকুর ঘাটে বসেই তিনি রচনা করেছিলেন ‘যে দিন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’।

বর্তমানে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় কুঠিবাড়ী সংরক্ষনের দায়িত্বে রয়েছেন। কুঠিবাড়ীর লাল-খয়েরী রং পরিবর্তন করাই কুঠিবাড়ী তার সুন্দর্য হারিয়েছে এমন অভিযোগ এখানে আসা পর্যটকদের। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য জীবনের বিরাট অংশের সাথে জড়িয়ে আছে পদ্মা নদী। তাই পদ্মা নদীর ঢেউয়ের মত করেই কুঠিবাড়ীর চতুর পার্শ্বে প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের আর্কিষ্ট করতে কুঠিবাড়ীর সম্মুখে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতীর ফুলের বাগান। কুঠিবাড়ীর মধ্যে পর্যটকদের চলাফেরা সুবিধার্থে নির্মান করা হয়েছে পাকা রাসত্মা । এই স্থানে পিকনিক করতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য সরকারী ভাবে কোন সুব্যবস্থা আজও করা হয়নি। পর্যটকদের জন্য থাকার একমাত্র স্থান হল ছোট্ট একটি ডাকবাংলা।