খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়ীতা সোনালী আক্তার'র শ্রেষ্ঠত্বের ইতিহাস
জয়িতা সোনালী আক্তারের সোনালী হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠার ইতিকথা =লিটন আব্বাস= মোছাঃ সোনালী আক্তার। পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। সংসার বড় থাকার কারণে ও পরিবারে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তার বাবা তাকে বেশিদূর লেখাপড়া শেখাতে পারেননি। সবেমাত্র এসএসসি পাশ করার পর বাবার দারিদ্রতার কারণে লেখাপড়া না করিয়ে তাকে ১৯৯৭ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার জসিম উদ্দিনের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। বিযের পরও তার লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছা থাকার কারণে তার স্বামী জসিম উদ্দিন তাকে কুমারখালী ডিগ্রী কলেজে ভর্তি করে দেন। কিন' স্বামীরও আর্থিক দৈন্যতার কারণে লেখাপড়া করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তার স্বামী একজন ড়্গুদ্র কাপড়ের ব্যবসা করতেন কুমারখালী বাজারে। যা দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করাই সম্ভব ছিলনা। বিবাহের পর থেকে সোনালী আক্তার লড়্গ্য করছিলেন যে, তার স্বামীর সংসারে নানা রকমের অভাব অনটন লেগেই থাকতো। সংসারের নানা টানাপোড়েন এবং সোনালী আক্তার এক ধরণের তাগিদ অনুভব করতে থাকলেন, স্বামীর আয়ের পাশাপাশি তাকেও কিছু করতে হবে-সংসারের স্বচ্ছলতা বাড়াতে হবে। লেখাপড়া শিখতে না পারার যন্ত্রণা, কষ্ট সবসময় তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াতো। কিছু একটা করার জন্য অর্থের দরকার পড়ে। তার স্বামী প্রথমে অল্প কিছু টাকা দিলে সোনালী আক্তার কিছু শাড়ী তৈরী করে বাজারের বিভিন্ন দোকানে দোকানে ঘুরেও বিক্রি করতে পারেনি। ক্ষতিগ্রস্থ' হওয়ার পর প্রথমদিকে হতাশ হলেও হাল ছেড়ে দেননি। পরবর্তীতে তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে স্বামীর অনুমতি ও উৎসাহক্রমে ২০০৪ সালে কুমারখালী বিআরডিবি থেকে ২০,০০০/= টাকা ঋণ নিয়ে দুঃস্থ' ও বেকার ৪/৫ জন নারীর সমন্বয়ে ‘সোনালী হসত্মশিল্প’ নামে একটি হস্তশিল্পের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কিছু সাফল্য দেখতে পায় ফলে সেক্ষেত্রে আরো পুঁজির প্রয়োজন হলে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করার পর অর্থ না পেয়ে বাবার দেওয়া বিয়ের সময়ের সামান্য গহনা (স্বর্নালংকার) বিক্রি করে সোনালী আক্তার ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেন। ২০০৪ সালে যখন এই হস্তশিল্প গড়ে ওঠে প্রথমদিকে বেশকিছু সমস্যার সম্মুখীন হন। পরিবারে প্রথম দিকে তার স্বামী ছাড়া অন্যরা ভাল চোখে দেখতো না। অনেক কষ্ট করে গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারী কর্মী যোগাড় করতে গিয়ে তাকে অনেক লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি সমাজের মানুষও নানা ধরনের বিরূপ মন্তব্যকরতো। সমাজের নিম্নআয়ের অভিভাবকেরা তাদের মেয়েদের এই হস্তশিল্পে কাজ করতে বাধা দিতো। প্রথম দিকে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কাজের জন্য সোনালী আক্তারের বাইরে যাওয়া, একদিকে যেমন ছিল পুঁজির স্বল্পতা, সনত্মান রেখে বাইরে কাজ দেখতে যাওয়া সামাজিকভাবে সমাজের অনেকে প্রথমদিকে নেতিবাচক চোখে দেখতো। সংসারের কাজের সমস্যা দেখা দিলে তার স্বামী তাকে যথেষ্ট সহযোগিতা, উৎসাহ দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এসব কিছু উপেড়্গা করে সকল প্রতিকুল অবস্থার সাথে সংগ্রাম করতে করতে তিনি এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মোট কথা তিনি লক্ষ্যেছিলেন অবিচল, স্থিরএবং ধৈর্যশীলা। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন, আকাঙ্খা থাকলে একসময় ইচ্ছা পূরণ হবেই এই স্বপ্ন নিয়ে সোনালী হসত্মশিল্পের কার্যক্রম সকল বাধা বিপত্তি পার করে প্রতিষ্ঠানটিকে তিলতিল করে গড়ে তোলেন। অবশেষে তিন বছর পর তাঁর হসত্মশিল্পের তৈরী শাড়ি স্থানীয় ও বাংলাদেশের বিভিন্ন বাজারে ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হওয়ায় ব্যবসা সম্প্রসারিত হতে শুরুকরে পাশাপাশি নারী কর্মীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে তার কাজ ও সাফল্য দেখে সকলের মধ্যে আশার ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হয়। এভাবে ব্যবসার উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণে বর্তমানে ১২০০ মহিলা শ্রমিক তার কারখানায় কাজ করে তাঁরা নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে যেমন সংসারের ব্যয় নির্বাহ করছে তেমনি সোনালী আক্তারও পারিবারিকভাবে সাফল্য লাভ করেছে। উলেস্নখ্য যে, কারখানা প্রতিষ্ঠার সময় শাড়ি তৈরীর জন্য ৪/৫ টা ফ্রেম দিয়ে শুরম্ন করে বর্তমানে প্রায় ৫০০টি ফ্রেমে ১২০০ জন নারী তাদের বাড়িতে বসে সংসারের কাজের পাশাপাশি হসত্মশিল্পে তাদের নান্দনিক ছোঁয়ায় সুন্দর সুন্দর শাড়ী তৈরী করে বাজারে সুনাম অর্জন করছে। কারখানায় কাজ করছে বেতনভূক্ত কর্মচারী ২২ জন। তাঁরা শাড়ি তৈরীর পর নিপুণ হাতে ডিজাইন সম্পন্ন করছেন। শাড়ির থানকাপড়ে বিভিন্ন ডিজাইন এঁকে দেওয়ার পর মেয়েরা শাড়িতে চুমকি, পাথর, সুতার (কারচুপির) কাজ করে দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটাচ্ছে। এতে করে নারীর কর্মসংস্থান তথা নারীরা সংসারের কর্মক্ষমব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত হওয়ার পাশাপাশি নিজেদেরকে সংসারের গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা সহ সমাজ, দেশ ও জাতি গঠনে তথা সার্বিক অর্থনীতিতে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এড়্গেত্রে একজন নারী প্রতি মাসে ঘরে বসে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বর্তমানে ৪/৫ হাজার টাকা উপার্জন করছে। নারীরা পুর্ণ মাত্রায় কাজ করলে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা উপার্জন করাও সম্ভব। নারীদের এমন স্বাবলম্বী ও হসত্মশিল্পের বিকাশ দেখে কুমারখালীতে বেশকিছু ছোট বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেখানে বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার নারী শ্রমিক এই পেশার সাথে জড়িত থেকে অর্থনীতিতে ও পারিবারিকভাবে অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করছে। বর্তমানে এই পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সামাজিকভাবে মাঝে মধ্যে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা দিলেও অনুকরণ প্রিয় হিসাবে অনেক মেয়েরা এই পেশায় দিনদিন সংশ্লিষ্টহচ্ছে। এই হস্তশিল্পের প্রসার দীর্ঘসস্থায়ী টিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে স্বল্পশ্রম, কাঁচামালের সহজলভ্যতা, বিনিয়োগে শুরুতেক্ষুদ্রপুঁজি ও বাজারে ব্যাপক চাহিদার কারণে টিকে থাকবে পাশাপাশি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পের দ্রম্নত এবং স্থায়ী বিকাশ সম্ভব বলে সোনারী হস্তশিল্পের পরিচালক জয়ীতা সোনালী আক্তারের দৃঢ় বিশ্বাস। কোন ক্যাটাগরীর জন মনোনীত: ক- ক্যাটাগরী। উপরোক্ত ক্যাটাগরীতে মনোনীত করার কারণ সময়ঃ উপরে উল্লেখিত নারী সোনালী আক্তার, স্বামী- মোঃ জমীম উদ্দিন, পরিচালক, সোনালী হস্তশিল্প। নিজে আর্থিক ও সামাজিকভাবে সাফল্য অর্জন করেছে। পাশাপাশি অসহায়, বেকার, দুস্থ নারীদের সাবলম্বী করে তুলে তাদেরও পারিবারিক ভাবে উপার্জনক্ষম করে গড়ে তুলছে বিধায় তারাও জাতীয় অর্থনীতিতেও বেশ ভূমিকা রাখছে।এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও সফলতা দেখে অন্যরা উৎসাহিত হয়ে নিজেরা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। সেখানেও নারী কর্মীরা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এতে করে বাল্য বিবাহ রোধেও সহায়ক হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নঃ মনোনয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটির পক্ষে প্রত্যয়ঃ আমি মোঃ জিয়াউর রহমান খোকন, চেয়ারম্যান, নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদ, কুমারখালী, কুষ্টিয়া জয়ীতা অন্বেষন, বাংলাদেশ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় গঠিত ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটির পক্ষে প্রত্যয়ন করছি যে, ইউনিয়ন পর্যায়ের ব্যাপক প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে প্রাপ্ত সকল আবেদন যাচাই ও মূল্যায়ন করে উপরোক্ত মনোনীত প্রার্থীকে প্রার্থীর সকল তথ্যাদি সরেজমিনে যাচাই করে সত্যতা ও বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে উপরোক্ত ক্যাটাগরীতে ইউনিয়ন পর্যায়ের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রার্থী হিসাবে কমিটির সকল সদস্য মিলে যৌথভাবে অনুমোদন করে উর্দ্ধতন কমিটির বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করলাম। প্রিন্ট মিডিয়ায় সোনালী হস্তশিল্পের সংবাদ ১৫-১০-২০০৮ইং তারিখে নয়া দিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ
১৬-০৫-২০১০ইং তারিখে আমারদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ
বাংলাদেশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত জয়ীতা অন্বেষণে ক’ ক্যাটাগরীতে খুলনা বিভাগের অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসাবে শ্রেষ্ঠ জয়ীতা সম্মানে ভূষিত হলেন কুমারখালী সোনালী হস্তশিল্পেরপরিচালক সোনালী আক্তার। গত ৭ ফেব্রম্নয়ারি’২০১৪ খুলনার সরকারী করোনেশন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হলরুমেতাঁকে এ সম্মাননা(ক্রেস্ট) প্রদান করা হয়। বামে সোনালী হসত্মশিল্পের প্রতিষ্ঠাতা সোনালী আক্তার কে ক্রেস্ট প্রদান করছেন খুলনা বিভাগের কমিশনার মোঃ আব্দুল জলিল। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে উপসি'ত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশরাফ উদ্দিন।
সোনালী হশিল্প পরিদর্শন করছেন কলকাতা (ইণ্ডিয়া) থেকে আগত সাহিত্যিক শুভ প্রসন্ন এ সময় উপস্থিতছিলেন সোনালী হস্তশিল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জসিম উদ্দিন, সাইমন কনক, নাট্যকার, কলামিস্ট লিটন আব্বাস প্রমুখ। web developer (Amran Hossain Arif, Nandolalpur u.p. 01715-079323) |
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS